মোঃ ইসমাইল হোসেন (IEM 16) এর ঘটনা

আমি মোঃ ইসমাইল হোসেন(1611056) আর আজকে আমি লিখসি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া অমানসিক ও অমানবিক নির্যাতনের কথা।

অনেক স্বপ্ন নিয়ে কুয়েটে আসা। আমি মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলাম। নিয়মিত নামাজ পড়তাম এবং মসজিদে যাওয়া হতো।

সময়টা মার্চ-২০১৭, ভার্সিটি জীবনের ১ মাস সময় যেতে না যেতেই শিবির ট্যাগ দিয়ে আমাদেরই আই ই এম’১৫ ব্যাচের ও অপরিচিত ১২-১৫ সিনিয়র আমার ওপর (স্টাম্প, লোহার পাইপ দিয়ে) অমানবিক অত্যাচার করে। সেন্সলেস হওয়ার পর পানি ছিটিয়ে সেন্স ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবার অত্যাচার চালিয়ে যায়। যার শারীরিক ও মানুসিক আঘাতের ক্ষত আমি বয়ে বেড়াচ্ছি এখনো।

ঘটনার দিন শুরুতে আই ই এম-১৫ এর সুদিপ, ফয়সাল, পলক, মাহিনসহ আরো ৫-৭ জন বিকেল ৫.১০ মিনিট নাগাদ আমাকে অমর একুশে হলের গেস্ট রুমে নিয়ে যায়। শিবির করি বলে ফোন চেক দেয় এবং তাতে কিছু না পেলে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রেসার দিতে থাকে। আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই অস্বীকার করি। এইভাবে মাগরীবের আজান দিলে আমি নামাজ আদায় করতে চাইলে তারা তাতে অস্বীকার করে।

পরে জামাত শেষ হলে মুসল্লিরা হল মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে ২ জন সাথে করে মসজিদে নিয়ে যায়। হল মসজিদে নামাজ আদায় করি ও দোয়া করি। নামাজ শেষে আবার সেই গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে আবার উনারা আমার উপর চড়াও হন এবং সাথে গায়ে হাত তুলতে শুরু করে। সেইখান থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৫ নাম্বার রুমে যেটা সেইসময় ছিলো পলিটিকাল সেকেন্ড ইয়ারদের রুম।

৪১৫ এর ঐ রুমে উপস্থিত ছিলো আমাদের আই ই এম’১৫ এর কৌশিক, রাহুল,ইমন,তাশদীদ, জয়ন্ত, অর্জুন সহ অন্য ডিপার্টমেন্টের অনেকেই। যাদের অনেকের সাথে আগে পরিচয় না থাকাই চিনতে পারি নি। যাইহোক, সেখানে নিয়ে গিয়ে আমার ফোন থেকে আমার রুম্মেট ইইই-১৬ এর শাহাবুল ইসলামকে দিয়ে আমার ল্যাপটপ আনায়।

সে রুমের ভিতরে ঢুকতে গেলে রায়হান(CE-15) তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বলে তুই কেউরে কিছু বললে তোরেও একই অবস্থা করব। এরপর তারা আমার ল্যাপটপ চেক করা শুরু করেন, তাতে কিছু না পেলে তারা আমার ওপর আবারও নির্যাতন শুরু করে। আইইএম-১৫ এর সুদিপ, ফয়সাল, কৌশিক, রাহুল সহ আরো অনেকেই বিভিন্ন দিক থেকে স্টাম্প, লোহার পাইপ দিয়ে প্রহার শুরু করে। তীব্র ব্যাথায় আমি চিৎকার দিলে তারা আমার মুখে গামছা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে আমি সেন্সলেস হয়ে মেঝেতে পড়ে যাই।

কিচ্ছুক্ষণ পর সেন্স ফিরে আসলে দেখি আমার মাথা ও শরীর ভিজা আর আমাকে জোর করে পানি খাওয়াচ্ছে। জ্ঞান ফিরে আসার সাথে সাথে তারা আবার আমাকে মারা শুরু করে আর আমার অজ্ঞান হওয়াকে তারা নাটক করছি বলে ধমকাতে থাকে। সেই সময় আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে যদিও আমি ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না, কিন্তু নতুন কিছু কন্ঠস্বর যুক্ত হওয়া টের পাই।

অবশেষে টানা ৫-৬ ঘন্টা অমানবিক নির্যাতন শেষে, আমার শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ না পেয়ে, আমাকে জোরপূর্বক একটা কাগজে শিবির সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে স্টেটমেন্ট দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে তারা পুলিশি ভয় দেখিয়ে একটি পেজে সিগনেচার নেয় যেখানে তারা আমাকে শিবির না বললেও, ১৪ ব্যাচের ভাইরা আমাকে শিবির করতে চাপ দিয়েছেন সেটা উল্লেখ করতে বলেন(আমাকে মারার দুইদিন আগে ১৪ ব্যাচের কয়েকজন ভাইদের মারা হয়েছিলো)।

শেষে তারা আমাকে হুমকী দেয় কেউকে এই ঘটনার কথা জানালে আমাকে আবার মেরে পুলিশে দেয়া হবে।সবার শেষে হলের এক সিনিয়র ভাই (আমি কিছু দেখতে বা বুঝতে পারছিলাম না) আমাকে অনেক ভূগোল বুঝিয়ে বলে পুলিশে বা মেডিকেলে বা বাসায় জানালে কুয়েটে পড়াশোনা দূরের কথা আমি জীবন নিয়েও ফেরত যেতে পারবো না।

এরপর তাদের মধ্যে ২ জন আমাকে কাধে করে রিকশায় উঠায় এবং মেসে রেখে আসে (আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না)। ঘটনার পর এরা আমার খোজ নেওয়া তো দূরের কথা খাবার ও পানিটা দিয়ে যায়নি। তখন টানা এক সপ্তাহের মত আমি ক্লাসেও যেতে পারিনি, শারীরিকভাবে এতটাই আহত ছিলাম। আর মানসিক যে ট্রমা আমি এত বছর বয়ে চলেছি, এদের উপযুক্ত শাস্তির পরই হয়তো শেষ হবে।

অথচ পরের তিনটা বছরও ক্যাম্পাসে এসব সন্ত্রাসীদের বুক ফুলিয়ে ক্যাম্পাসে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে চলতে দেখেছি, হলের ডাইনিং এর টাকা মেরে পকেট ভর্তি করেছে অনেকেই। ফয়সাল নামক বদমাইশটাকে ক্যাম্পাসে ছাত্র মারা নিয়ে রাস্তাঘাটে গর্ব করতেও শুনেছি।

ঐ সময় তাবলীগের ভাইদের সাহায্যে আমি সারভাইব করেছি। ঘটনার পরের দিন তাবলীগের ভায়েরা মেহনতে গিয়ে আমার এই অবস্থা দেখে, নেক্সট ৪-৫ দিন আমার জন্য খাবার ও পানি এনে দিয়েছিলেন। ৪৫ দিন পরে বাসায় গেলে হাত ও পায়ের ক্ষত দেখে আমার আম্মু বুঝে ফেলে আমাকে মারা হয়েছে। আমার কাছে (২ বার ধোয়া) রক্তাক্ত পায়জামাটা আম্মুর চোখে পড়লে, সেটা আম্মু রেখে দেয়। আমি তাদের ভয়ে চুপচাপ তিন বছর কাটিয়েছি, সেদিনের ঘটনার কথা কাউকে বলিনি।

এখন যখন দেখছি চারিদিকে সবাই বিচার চাচ্ছে আর সেই সন্ত্রাসিগুলা ভালো মানুষের মুখোশ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন মনে হইসে এদের যদি শাস্তির আওতায় না হয়, তাহলে আমার মতো হাজারো ইসমাইল আবারও নির্যাতিত হবে। তাই আমি আমার পক্ষ থেকে এদের ভদ্রতার মুখোশ খুলে দিতে চাই বলেই আজকের এই পোস্ট করা। আমি চাই না আর কোনো শিক্ষার্থী কুয়েটে এসে সন্ত্রাসীদের এই ভয়ংকর রূপ দেখুক।

যতক্ষণ আমার জ্ঞান ও দৃষ্টিশক্তি ছিলো যেসকল সন্ত্রাসীদের চিনতে পারছিলাম:

১. ফয়সাল (1511036) ও সুদীপ (1511057)

২. কৌশিক (1511028) ও রাহুল/তাশরীফ(1511013)

৩.পলক (1511041), জয়ন্ত (1511003), *রায়হান(CE-15)*

৪. মাহিন (1511044), তাশদীদ (1511006)-সহ আরো অনেকেই।

Other Incidents

6 Comments

  1. Hello I am so excited I found your blog page, I really found you by error, while I was searching on Google for something else, Regardless I am here now and would just like to say thank you for a marvelous post and a all round entertaining blog (I also love the theme/design), I don’t have time to look over it all at the minute but I have saved it and also added in your RSS feeds, so when I have time I will be back to read a lot more, Please do keep up the awesome work.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *