জাহিদুর রহমান (ECE 19) এর ঘটনা
ফিরতে হবে দুই বছর আগে।
১২ই সেপ্টেম্বর ২০২২
আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই আগে। আমি জাহিদুর রহমান। আমার সাথে ঘঠে যাওয়া এক নির্মমতাকে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
সেদিন আমি আর আমার বন্ধু পার্থ আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। তখন হলের সামনে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১৮ ব্যাচের ছাত্র আদনান রাফির সাথে দেখা হয়। সে পার্থর কাছে জানতে চায় আমরা কোথায় যাচ্ছি। পার্থ নামাজের কথা বলে। তারপর রাফি বলে নামাজের পর আমরা যেন তার সাথে দেখা করি।
নামাজ পড়ে এসে আমরা টিটি রুমে রাফির জন্য অপেক্ষা করি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রাফি না আসায় আমি রুমে চলে চাই। ১২ই সেপ্টেম্বর সেদিন ছিল আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের সেকেন্ড সেমিস্টারের প্রথম দিন। আমি রাফ খাতা থেকে নোটগুলো বিষয় ভিত্তিক নোট খাতায় সাজাচ্ছিলাম। আনুমানিক দশ থেকে পনেরো মিনিট পর লেদারের ১৮ ব্যাচের রাফি, রিজভী ও রূপক এবং টেক্সটাইলের ১৮ ব্যাচের সাফাত, ফুয়াদ, মিঠু আসে আমার রুমে।
আমাকে জিজ্ঞেস করে পার্থ কই। আমি ওরে টিটি রুম থেকে ডাকতে যাই। এর মধ্যে ও চলে আসে। ওরে নিয়ে ১১৫নং রুমের সামনে যাই। আমাকে রুমের বাহিরে রেখে ওরা পার্থর (১১৫ নং রুম রশিদ হল) রুমে ঢুকে সবাই।
কিছুক্ষণ পর পার্থকে বের করে দিয়ে আমাকে ডাকে। এরপর সেখানে যারা ছিল তাদের সবার পরিচয় জানতে চায়। যাকে যাকে চিনি তাদের পরিচয় বলি। তখন সবাইকে চিনতামও না।

এরপর আমাকে জিজ্ঞাসা শুরু করে আমি হলে উঠলাম কিভাবে পলিটিক্যাল কাউকে না জানিয়ে। আর আমি একা একা কেন থাকি? হলের কারো সাথে মিশি না কেন? রুম থেকে বের হইনা কেন? এই বিষয় প্রশ্ন করা শুরু করে । আমি হলে উঠিই ২-১ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে পিএলের মধ্যে। পরীক্ষার মধ্যে পড়াশুনার ব্যস্ততার কারণে তেমন কারও সাথে মেশাও হতোনা।
পরীক্ষার মধ্যেও হলের নানান কলে মিছিলে মিটিং এ ডাকাডাকি করত সম্ভবত ২/৩ বার গেছিলাম (রুম থেকে ধরে নিয়ে যাইত বলা গেলে)। যার জন্য ওদের নজরে চলে আসি। এবং অন্যদেরকে বলেও যে এরকম হলে রুম তালা মেরে দিবে। ১৯ ব্যাচ এর পলিটিকাল ১১৩/১১৪ নং রুম একবার তালা মরে দিয়েছিলো একদিন বিকালের ঐ রুমের কেউ মিছিলে না থাকায়। হল থেকে ১১৭ নং রুমের সবাইকে বের করে দিবে।
আর তাছাড়া কোভিডের মধ্যে এলাকায় ফুটবল মাঠে দুর্ঘটনায় আমার বাম চোখের ওপরের হাড় ভেঙে যায় হাড় ভেঙে চোখের মধ্যে চলে আসে কিছুটা এবং চোখের ওপরে দেখতে গর্তের মতো হয়ে যায়। দেখতে খারাপ লাগত। তাই আমি চুল বড় করে কপালের উপরে রাখতাম চুল। এই দূর্ঘটনায় আমার রাইট ফ্রন্টাল সাইনাস ওপেন হয়ে যায়। এর আগে থেকেই সাইনাসের ও ফটোফবিয়ার সমস্যা ছিল যা দুর্ঘটনার পর আরো বেড়ে যায়।
ফটোফবিয়ার সমস্যার আমি সব সময় ফটোসান গ্লাস ব্যবহার করি। ফটোসান/ব্লুকার্ড গ্লাস ছাড়া খালি চোখে আলোর মধ্যে আসলেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয় ও চোখের কোটরে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে আমার বেশি সমস্যা হয়। যার জন্য আমি বাসায় বা রুমে থাকলে সব সময় দরজা জানালা বন্ধ করে রাখি। বাহিরেও খুব একটা বের হওয়া হতোনা তখন।
আমার যে চোখের ওপরের হাড় ভাঙা সে চোখে আমার অপারেশন করানো দরকার। অর্থনৈতিক সমস্যা তো আছেই, আর চোখের ওপরের অপারেশন করা জটিল হবে আর ঝুকিপূর্ণ। তাই ডাক্তাররা ২ বছর অপেক্ষা করতে বলছে। এর মধ্যে হাড় ঠিক না হলে পরবর্তীতে তখন সিদ্ধান্ত দেবেন। আমি তাদেরকে এই বিষয় গুলো বলি।
কিন্তু তারা বলে, না! অন্য কারণ আছে। তাদের কাছে খবর আছে আমি শিবির করি। আমি বলি না আমি শিবির করি না। তারপর আমাকে হুমকি দিতে থাকে আমার সাথে কে কে আছে আর কুয়েটে এবং আমি শিবির করি এই স্বীকারোক্তি দিতে তাহলে আমাকে ছেড়ে দিবে না হয়, আমার থেকে স্বীকার কী করে নিতে হয় সেটা নাকি তারা খুব ভালো করেই জানে।
আমি বারবারই অস্বীকার করি। তারপর ওরা আমাকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দেয়। এর মধ্যে যদি আমি শিবির করার কথা স্বীকার না করি, তাহলে তারা আমাকে ছাড়বেনা। আমি তখনও বুঝতে পারছিলাম না যে আজ কিছুক্ষণ পর কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে। এর মধ্যে ওরা রুমে স্টাম্প, প্লাস্টিকের এস এস পাইপ, ও রড নিয়ে আসে। আমি এর মধ্যে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতে চাই। কিন্তু ওদের শর্ত হল নামাজ পড়লে রুমের মধ্যেই পড়তে হবে। বাহিরে বের হতে দিবে না। আসরের নামাজ পড়ার অজু থাকাতে আমি রুমেই নামাজ পড়ি।
কিছুক্ষন পর ওরা আবার আসে। সাথে স্টাম্প, এস এস পাইপ ও রড। ওরা আমাকে মারার জন্য রেডি এবং আবার জিজ্ঞাসা শুরু করে। আমি এবার অস্বীকার করা মাত্রই ওরা আমার ওপর একসাথে হামলে পরে।সবার আগে রাফি আর রিজভী আমার পায়ে মারা শুরু করে স্টাম্প দিয়ে।
আমাকে ওরা ওদের মাঝখানে রেখে রাফি, রিজভী, মিঠু, ফুয়াদ, সাফাত আমার চারপাশে হায়েনাদের মতো ঘিরে যে যার মতো আমার কোমড়ের নিচে থেকে পায়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মারতে থাকে কেউ স্টাম্প কেউ পাইপ দিয়ে আমার মা-বাবা সহ ফ্যামিলির মানুষদের যে যেভাবে পারে অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দিতে থেকে। এভাবে কতসময় মারে আমার খেয়াল নেই, তারপর আবার বন্ধ করে আবার জিজ্ঞেস শুরু করে।
অস্বীকার করা মাত্রই আবার ওদের মার শুরু হয়। স্টাম্প, পাইপ,ঘুষি, থাপ্পড়, লাথি— যে যেভাবে পেরেছে ইচ্ছে মত জানোয়ারগুলো আমাকে মারতে থাকে। যতটা পারতাম হাত দিয়ে ওদের স্টাম্পের আর পাইপের বাড়ি গুলো ঠেকানোর চেষ্টা করতাম। আমি এর মধ্যে নানান কসম কেটে ওদের বললাম যে, না আমি কোন সংগঠনের সাথে জড়িত, না আমি শিবির করি। ওরা তথন রুম থেকে বের হয়ে ওদের সাথের আরেক জন রুপককে রেখে যায় আমার সাথে কথা বলে স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য।
রূপক এতক্ষণ বসেই ছিলো। আমাকে মারেনি একবারও। ও আমাকে বলে যে স্বীকার হতে যে, আমি শিবির করি। তাহলে কেউ আর কিছুই করবেনা। আমি ওরে বলি ভাই আমি কোন সংগঠন এর সাথেই জড়িত না। আপনি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান। ও বলল, ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস। আমার কিছু করার নাই । এভাবে কিছুক্ষণ ও কথা বলার পর ওরা সবাই আবার আসে।
আবার আমাকে এই ৫জন একই সাথে মারা শুরু করে। আমি যতটা পারি ওদের স্টাম্প আর পাইপের বাড়ি হাত দিয়ে ঠেকাতে চেষ্টা করি। প্রত্যেকটা বাড়ি হাতে লাগলে মনে হত এখনই হাতটা ভেঙে যাচ্ছে।
এভাবে মারতে থাকে আর স্বীকার করতে বলে আমি শিবির করি। এর মধ্যে আবার নতুন অভিযোগ বের করে ওরা আমাকে এত মারতেছে আমি কান্না করতেছিনা। ওদের কাছে কোন কাকুতি মিনতি করছিনা কেন? তার মানে, আমি নরমাল কেউ না। এজন্য আরও বেশি টর্চার করতে থাকে।
আমার পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলে ফ্লোরে বসে পরি।। তখন আমাকে ফ্লোরে শোয়াই দেয়। এর মধ্যে BECM এর ফারিজ এসে দেখে যায়। ও এমন ভাবে তাকাই আছে যেন আমাকে পারেনা তো মেরে ফেলে। ও কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। জোর করে আবার দাড় করাই পায়ে মারতে থাকে। আমার পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেলে আমি আবার ফ্লোরে বসে পরি।তখন পা ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল।
আমি বলি দেখেন আমি যদি শিবির করতাম আপনারা এত মারছেন আমাকে, আমার পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, আমি তো স্বীকার করতামই। ওরা বিশ্বাস করে না। আবার রূপককে বলে যায় জিজ্ঞেস করতে। আমি আমার জায়গায় অনড় ছিলাম। রূপকের সাথে কথা গুড়িয়ে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করছিলাম যেন ওরা আসতে দেরি করে।
আবার আসে ওরা। আর আমাকে আর দাঁড় করাতে পারছে না দেখে এবার ফ্লোরে শুইয়ে মারতে থাকে।ওরা এখন কেউ আমার পা ধরে রেখে পায়ের তলায় মারতে থাকে স্টাম্প দিয়ে। আর যে যেভাবে পারে লাথি ঘুষি পাইপ দিয়ে কোমরে মারতে থাকে। অনেকক্ষণ মারার পর আমার অবস্থা খারাপ হয় দেখে ওরা বালতিতে করে পানি নিয়ে আসে।
আমার মাথায় ও শরীরে পানি দেয়। যাতে আমি সেন্সলেস না হয়ে যাই। এরপর ওরা সবাই চলে যায়।
আবার ও একাই আমাকে জিজ্ঞেস শুরু করে। এবং আস্বস্ত করে স্বীকারোক্তি দিলে আমার কিছু হবে না আর।আমি আবারও অস্বীকার করি। এবং আগের মতো কথা গুড়িয়ে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করি।
তারপর ওরা সবাই আসে। ও সাথে LE 17 এর রায়হান ও তূর্য আসে। ওরা আইসা এমন ভাবে কথা বলেছিল যেন ও কিছু জানেনা। ওদের নেতৃত্বে ১৮ ব্যাচ এর ছাত্রলীগ আমাকে মারে। ও আমাকে জিজ্ঞেস শুরু করে আমাকে কেন ধরছে, কী সমস্যা! এইসব আমি ওরে সব বললাম যে ভাই (ওর মতো কুলাঙ্গার জারজকে ভাই বলতে ঘৃণা লাগে) আমাকে শুধু শুধু মারতেছে আমার অবস্থা খারাপ)!:আপনি আমাকে বাচান। ও তখন রশীদ হলের সমন্বয়ক ছিল। আমি ভাবছিলাম ও আমাকে বাঁচাবে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারি ওরা সবাই একসাথে।
ও আমাকে বলে, তুমি ওদের জুনিয়র দেখে এখনো বেঁচে আছো। ওরা তো এখনো তোমাকে কিছুই করেনি। আমার নাকি কপাল ভালো। ওদের ইমিডিয়েট জুনিয়র হলে ওদের হাতে পরলে এতক্ষণে মারা যাইতাম। পরে ১৮ ব্যাচের সাথে রাগ করে ওই পিশাচ। বলে, ওরা কি করতেছে! এখনো আমার থেকে কথা বের করতে পারছেনা কেন?
আমাকে ছাদের সাথে উল্টো করে ঝুলানোর কথা বলে যায়। আর কারেন্টের শক দিতে বলে দরকার হলে। এজন্য তারও আনে রুমে। পরে অবশ্য কারেন্টের শক দেয়নি। আর রায়হান, তূর্য বলে যায় এবার যদি ওদের কাছে স্বীকার না যাই, এরপর কী অবস্থা হবে তা কল্পনা করতে পারব না। ও চলে যায়। আবারও আমাকে ওরা মারতে থাকে।
আমি চিল্লাচ্ছি বাহির থেকে শব্দ শোনা যায় দেখে ওরা রুমে বক্স নিয়ে এসে হাই ভলিউম এ গান বাজানো শুরু করে যাতে আর বাহিরে আমার চিল্লানোর শব্দ না যায়।এবার আমাকে মারতেছে ৩/৪ জন করে। ওরা ক্লান্ত হয়ে গেলে পানি ও সিগারেট খায়ন। আবার অন্য ৩/৪ জন আসে।
এভাবে কতবার মারে খেয়াল নেই। এতক্ষণ ধরে রাফি, রিজভী, সাফোয়াত, মিঠু, ফুয়াদ ও ফাহিম মারে। রায়হান যাওয়ার পর ওদের সাথে তুষার আসে। এবং এরা ৬ জনই মারে ৩/৪ গ্রুপ করে।
আমার যতটুকু সেই বীভৎস রাতের কথা মনে পড়ে রিজভী আর রাফি এত বেশি শক্তি দিয়ে মারে, এই ২টা মিলেই আমার বাম পায়ের ওপরে ৩টা স্টাম্প ভাঙে। শুধু রিজভীর হাতেই ২টা স্টাম্প ভাঙ্গে।
ওদের মারের ধরন দেখে আমার মনে হইছিল যে, আজ আর হয়তো জীবিত থাকবোনা। বারবার আবরার ভাইয়ের কথা মনে পড়িতেছিল আর উপলব্ধি করছিলাম কতটা নিষ্ঠুরভাবে ভাইকে মারা হইছিল।
মা -বাবা,ভাই বোনের কথা মনে পড়তেছিল।
ওরা বলতেছিল, সমস্যা নাই তুই মারা গেলে তো শহীদ হবি। আর তোর আল্লাহ রে ডাক! তোর আল্লাহ তোঁরে বাঁচাইবো। ওরা আমাকে এলোপাতাড়ি যে যেভাবে ইচ্ছে লাথি ঘুষি স্টাম্প দিয়ে মারিতেছিলো। আর বলতেছিলো, তুই কেরে এত মাইর খাইতেছস! একটা গরুকে মারলেও সে সব স্বীকার করত কিন্তু তুই এত শক্ত কী করে আছস! এ জন্য ওরা আরও ক্ষেপে।
ওরা যতই মারত আমি আল্লাহকে, মা-বাবাকে বাঁচার শেষ আকুতিভরা মনে ডেকে যাচ্ছি। এছাড়া আর মাঝে মাঝে ওদের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলাম। বলছিলাম, ‘ভাই আমিতো আপনাদের ধর্মের ভাই। আমাকে আর মাইরেন না। আমি মরে যাব ভাই।’
আমার কোন আকুতিই সেদিন ওদের মন গলাতে পারেনি।
এরপর আবার রায়হান তূর্য আসে। চেয়ারে বসে ওরা আবার সেই একই কথা জিজ্ঞাসা শুরু। আমি ওর পায়ে ধরে বলি, ভাই আপনি আমাকে বাঁচান, না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ওর কথা একটাই— ওরা যা বলে স্বীকার করে নেও। তোমার আর কিছুই হবেনা। তূর্য ও আমাকে একই কথা বোঝাতে থাকে। স্বীকার করতে আর কারা কারা আছে শিবিরে তাদের নাম বলতে।
আমি আমার মতো অনড় ছিলাম। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমি তো শিবিরের সাথে জড়িত না। যদিও আমি এদের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য স্বীকার করি আর ইচ্ছে মতো কারও নাম বলে দিই, ওরা তো তারে ধরে এনেও একই নৃশংস কায়দায় অত্যাচার করবে।
যতো যাই হোক, আমি মরে গেলেও এদের কোন কথাই মানবো না।আমার নিজের বাঁচার জন্য কারোর শুধু শুধু ক্ষতি করবোনা। আজ বাঁচি মরি যা আল্লাহ ভাগ্যে রাখছে।
এবার রায়হান চেয়ার থেকে উঠে আমাকে ওর সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এলোপাথাড়ি লাথি দিতে থাকে। আমার প্রায় ভাঙা পায়ে আমি যন্ত্রণায় পাগল প্রায় হয়ে চিল্লাতে থাকি। জোরে জোরে ওরা বক্সের সাউন্ড আরো বাড়ায় যাতে বাহির থেকে কেউ শব্দ না পায়।
ও যাওয়ারর পর সাফওয়াত আবার পানি নিয়ে আসে আমার মাথায় পানি দেয়। রিজভী ডাইনিং থেকে খাবার নিয়ে আসে।আমি খাইতে অস্বীকার করি। কারণ হাতে এত ব্যাথা আর যন্ত্রণা যে নিজ হাতে খাওয়া সম্ভব ছিলো না ।
আমার দুই হাতেরই অবস্থা তখন খুব খারাপ। হাতে এতো স্টাম্পের আর পাইপের বাড়ি লাগছে কোন কিছুই আর ধরতে পারছিলাম না। রিজভী তখন খাইয়ে দেয়। খাওয়ানোর ওরা আমাকে কী যেন একটা ঔষধ খাওয়ায়। আমি তখন যা বুঝতে পারলাম, যাতে সেন্সলেস না হই এজন্য হয়তো ঔষধ খাওয়াচ্ছে।
এতক্ষণ ধরে শুরু থেকেই ওরা আমাকে খেয়াল করেই কোমড় থেকে নিচে আর হাতেই বেশি মারত
এরপর ওরা রুম থেকে চলে গেলে পার্থ আসে রুমে। এতক্ষণ পার্থকে ওরা অন্য রুমে আটকে রাখে।
পার্থ আমার অবস্থা দেখে কান্না করে দেয়। ও ভাবতেই পারে নি এতক্ষণ ধরে ওর রুমে ওর বন্ধু কে ওর পলিটিকাল ভাইরা মৃত প্রায় অবস্থা করে রাখছে। আমি ওরে আমার রক্তাক্ত পা দেখাই। ওদের স্টাম্প আর পাইপের আঘাতে পা পেটে রক্তে ট্রাউজার কিছু টা লাল হয়ে গেছে । আমার তখন পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়াতে বাহির এ মেসে থাকা কষ্ট হয় দেখে পার্থকে জানালে ও আমাকে হলে ওঠার পরামর্শ দেয়। আর ও সব ম্যানেজ করবে বলে কথা দেয়।
যার জন্য আমি ছাত্রলীগের হল কমিটির আর কারো সাথে কথা বলিনি। এজন্য ও আমার কাছে মাফ চায় তখনই। বলে ভাই আমি জানতাম না, এরা যে এত জানোয়ার! তুই আমাকে মাফ করে দিস! ও নিজেও হল ছাত্রলীগকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, আমি শিবির করি না বা কোন কিছুর সাথে জড়িতো না।বপরবর্তীতে জানতে পারি আমার পক্ষ নেওয়াতে ওরেও নাকি বলতেছে ও আমার সাথে জড়িত। ও শিবির করে অথচ ও নিজেও তখন হল ছাত্রলীগের সাথে জড়িত।
আমাকে যখন এত টর্চার করা হচ্ছিল, আমিও বলেছিলাম যে আপনারা পার্থকে জিজ্ঞেস করেন। ও সব জানে আমার সম্পর্কে। ওরা বলতেছে আমি নাকি পার্থ কেও জড়াতে চাচ্ছি আমার সাথে। ওদের থেকে এধরনের কথা শুনার পর পার্থকে জড়িয়ে বা অন্য কাউকে জড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করার জন্য আর কোন ব্যাচমেট বা কারও নাম নেই নি। কারণ ওরা আবার তাকেই সন্দেহ করবে। আমার মতো একই পরিস্থিতি তারও হতে পারে।
পার্থ তখনও হল পলিটিক্স এর সাথে জড়িত (ওরে জোর করেই জড়িত করছে পলিটিক্সে। ২য় বর্ষের শুরু থেকেই পলিটিক্স ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু পলিটিকালদের হুমকি আর পাশবিকতার ভয়ে পারেনি। আলহামদুলিল্লাহ পরে ও পলিটিক্স ছেড়ে দিয়েছিলো। হলে ওঠার পর আমি আর পার্থ দুইজনই কয়েকদিন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম হল ছাড়ার বিষয়ে। হয়ত আর কয়েকদিনের মধ্যে ছেড়ে দিতাম। সেই সুযোগ আর হয়নি।
আমাকে তখন ১১৫ নং রুম থেকে গেস্ট রুমে নিবে। ট্রাউজার রক্তাক্ত দেখে পার্থকে দিয়ে আমার রুম থেকে আমার আরেকটা ট্রাউজার আর শার্ট নিয়ে আসে। বলে যায় আগের গুলো পরিবর্তন করতে। আমার অবস্থা খুবই খারাপ। দাঁড়াতে ও পারছিনা। হাত দিয়ে কিছু ধরতে পারছিনা আর।
পরে আবার পার্থকে এনে আমার কাপড় পরিবর্তন করায়। পার্থ যখন আমার ট্রাউজার আর টি শার্ট খুলে তখন দেখতে পায় কতটা নির্মম নৃশংস ভাবে আমাকে টর্চার করা হয়েছে। হাত-পা ফুলে গেছে অনেক। এজন্য ট্রাউজার পরা যাচ্ছিল না। অনেক কষ্টে পার্থ ট্রাউজার পরিয়ে দেয়। আর ওর চোখ দিয়ে পানি পরতেছিল। ও নির্বাকের মতো যেন কোন কথাই বলতে পারছিলনা আর।
আমি হাঁটতে পারতেছি না। পায়ে ভর করে পরবর্তীতে সাফওয়াত আর ওর সাথের কে যেন আমাকে ধরে নিয়ে গেস্ট রুমে ফ্লোরে বসায়। তখন রাত সাড়ে দশটা। আসরের সময় থেকে শুরু হয়েছিলো আমার সাথে এই পাশবিকতা।
গেস্টরুমে যেয়ে দেখি আগে থেকেই সিভিলের ১৫ ব্যাচের বাপ্পি বসে আছে। আবার ও জিজ্ঞেস শুরু করে। ও আবার নতুন অভিযোগ নিয়ে আসে, আমি নাকি মুজিবকে নিয়ে কটুক্তি করছি। সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত ওদের অভিযোগ ছিল, শিবির! এখন আবার মুজিবয
তারপর ও যা জিজ্ঞেস করছিল আমি আর উত্তর দেইনি। ও আমাকে ইচ্ছে মত মাথায় মুখে আঘাত করতে থাকে ওর হাত দিয়ে । আমি হাত দিয়ে নিজেকে তেমন একটা রক্ষা করতেও পারছিলাম না আর।
হাতের অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাত নাড়াতেই কষ্ট হচ্ছিলো। সন্ধ্যায় আমার চশমা ১১৫ নং রুমেই পরে যায়। ফটোফবিয়ার সমস্যা জনিত মাথা ব্যাথা সাইনাসের ব্যাথা সব এক সাথে, তার সাথে মারের যন্ত্রণা— মনে হচ্ছিল মারা যাচ্ছি।
এর মধ্যে হল প্রভোস্ট আসেন। স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার্সের ডিরেক্টর আসেন। সিকিউরিটি ইনচর্জ সাদেক হোসেন প্রামাণিক আসেন, যিনি কিনা কুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি নয়নের আপন বড় ভাই।
ওনারা হলের প্রোভস্ট রুমে অথচ ওনাদেরই উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসীরা গেস্ট রুমে কী নির্মম ভাবে মারতে মারতে আমাকে মৃত-প্রায় করে ফেলেছিলো। আমি তখন ভাবছিলাম স্যাররা যেহেতুএসেছেন, এখন আমাকে উদ্ধার করবে।
আর কোন নৃশংস টর্চারের স্বীকার হবো না। কিন্তু ওনারা কেউ গেস্ট রুমে আসলেন না আমাকে দেখতে বা উদ্ধার করতে। ওরা যতক্ষণ ইচ্ছে মারল তারপর প্রভোস্টের রুমে নিয়ে গেলো। সেখানে নেওয়ার পর ওদের নতুন অভিযোগ স্যারদের সামনে উপস্থাপন করলো।
আমি নাকি শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করছি। কোত্থেকে যেন স্ক্রিননশটও নিয়ে আসছে। অথচ সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ মারল শিবির স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য, স্বীকারোক্তি না নিতে পেরে এখন আমার ওপর সকল টর্চার হাসিনাকে কেন কটুক্তি করলাম বলে জায়েজ করে নিলো।
আমি হাসিনাকে নিয়ে কোন কটুক্তি করিনি। কোর্ট থেকে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। সব এভিডেন্স আমার কাছে আছে। আর আমি যদি করেও থাকি তাতে ওদের এই অধিকার কে দিল এভাবে আমাকে টর্চার করার!
প্রোভস্ট ডিএসডব্লিউ ডিরেক্টর স্যারকে তখন ওরা বোঝাচ্ছে আমার কত বড় অপরাধ, আরও কত কী! এর মধ্যে আবার কুয়েটের আরেক জানোয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাস সেলিম স্যারের খুনি সেজানকে রায়হান ফোন করে জানায় জ*ঙ্গি ধরা পড়ছে রশীদ হলে। তাড়াতাড়ি আসতে। কুখ্যাত সন্ত্রাস ও খুনি সেজান তখন ক্যাম্পাসের বাহিরে ছিলো। এর মধ্যে সিভিলের ১৮ ব্যাচের নিহাল আসে। আমি ওর কাছে রিকোয়েস্ট করি, ভাই আমাকে বাঁচান! ওর জবাব ছিল, ‘না, ভাই তুই যে অপরাধ করছস, তোরে কেউ বাচাতে পারব না।’
আমাকে যখন আসরের পর ধরে নিয়ে যায় তখন ওরা আমাকে আমার রুম থেকে ফোন নিয়ে যায় আর পরে আমার রুম থেকে ল্যাপটপও নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার ফোন আমি নিহালের হাতে দেখতে পাই। ও আমার ফোন ল্যাপটপ চেক করছিল আমার কাছে নিষিদ্ধ কোন বই বা কিছু আছে কিনা। আমাকে জঙ্গি প্রমাণ করা যায় কিনা। কিছুক্ষণ পর সেজান আসে।
ও আমাকে প্রভোস্ট রুম থেকে আবার গেস্ট রুমে নিতে চায়। আমি ইসমাইল সাইফুল্লাহ স্যারকে রিকোয়েস্ট করলাম স্যার আপনি আমাকে বাঁচান, না হয় ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। স্যার আমার কথা তো শুনলই না উনি রুম থেকে বের হয়ে গেল। আর বলল বাবা আমি পারব না।
প্রভোস্ট স্যার বললো, তোমরা সন্ধ্যা থেকে ওরে জিজ্ঞাসা করছই, আর দরকার নেই। আমরা পুলিশকে ফোন করছি। পুলিশ এসে ওরে নিয়ে যাবে। তখন ওরা বলতেছিলো তুই শিবির করছ! স্বীকার কর! আর কিছু হবে না পুলিশকেও দিবনা। আর না স্বীকার করলে পুলিশে দিবো।
পরবর্তীতে সেজান সহ ওরা জোর করে আমাকে হল প্রভোস্ট এর রুম থেকে আবার গেস্ট রুমে নিয়ে যায়।
এর মধ্যে হল প্রভোস্ট অথবা ছাত্রলীগের কেউ ফোন করে তৎকালীন কলুষিত ছাত্ররাজনীতির পৃষ্ঠপোষক সদ্য পদত্যাগ করা ভিসি মিহির রন্জন স্যারকে জানায়। উনি একবার আসলো না যে কী হচ্ছে।। একবার অন্তত এসে দেখে যেতে পারত! যাইহোক ভিসি স্যার জানার পরও এবং প্রভোস্ট ও DSW স্যার উপস্থিত থাকার পরও আমাকে প্রভোস্ট রুম থেকে গেস্ট রুমে নিয়ে আরও নির্মম নৃশংস পাশবিক ভাবে নির্যাতন করে।
সেখানে আমাকে নেওয়ার পর সেজান বাপ্পি সহ ছাত্রলীগের অপরিচিত আরও ৩/৪ জন আসে ১৮ ব্যাচ এর ওরা সবাই থাকে সিনিয়র। ওরা সবাই সোফায় বসে। আমার তো দাড়ানোর মতো অবস্থা ছিল না। আমাকে ফ্লোরে বসায়। আবার একই জিজ্ঞাসাবাদ এবার আমাকে সাফাত আর রায়হান এস এস পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। আমার পিঠে মাথায় রানে ঘাড়ে আর সন্ত্রাসী রায়হান গালিগালাজ করতে থাকে।
আমি নাকি হাসিনাকে কটুক্তি করছি। আমি এখন একেবারেই বোধ শক্তিহীন! ওরা যে এত মারতেছে কোন কিছুই আর গায়ে লাগছে না মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার আমার ল্যাপটপ নিয়ে আসে। আমার রিকভারি ফাইল ফুল দেখাচ্ছে তবে সেখানে কোন ফাইল নেই। এখন ওদের সন্দেহ আমি কোন পাসওয়ার্ড সেট করে ফাইল সিক্রেট করে রাখছি। এখানে ওদের পাসওয়ার্ড বললাম।
আমি জানিনা কেন এমন দেখাচ্ছে। সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনছিলাম। ওরা বিশ্বাস করেলো না আমার কথা। টর্চারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলো। তাও স্বীকার করছি না দেখে সেজান ওদেরকে লোহার বা স্টিলের পাইপ নিয়ে আসতে বলে।
সাফাত এগুলো না পেয়ে বাসার দরজার এঙ্গেল নিয়ে আসে। পরবর্তীতে প্লাস আনায়। আমার হাতের পায়ের নখ তুলার জন্য। আমি ঐদিন সকালেই নখ কাটছিলাম। নখ ধরা যাচ্ছিল না। তাই আবার হাতুড়ি নিয়ে আসে। হাতুড়ি দিয়ে আমার হাতের আঙুল কব্জি পায়ের গিরায় সেজান মারতে থাকে আর বলে গোপন ফাইল বের করে দিতে। শিবির স্বীকারোক্তি দিতে।
আর রায়হান তো পিঠে পাইপ দিয়ে ওর গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মারতে থাকেই তখনও । হাতুড়ির আঘাতে হাত পা ফেটে আবার রক্ত বের হচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ মারা হয় আমি জানিনা।
এর মধ্যে পুরো সময় আমি ওদের কোন কথায় আর কোন উত্তর দেইনি। চুপ ছিলাম। পুলিশ আসতেছে শুনে ওরা আমাকে টর্চার করা অফ করে দিয়ে সিনিয়রগুলো বের হয়ে যায়। আর ১৮ ব্যাচরে বলে যায় আমাকে প্রভোস্ট এর রুমে নিয়ে যাইতে।
১৮ এর রাফি আর সাফাত আবার আমাকে এলোপাথাড়ি লাথি দিতে থাকে গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে। আমার পা ফুলে যাওয়াতে আর জুতো পরা যাচ্ছিল না।খালি পায়েই আমাকে রশীদ হলের কর্মচারী সাদ্দাম ভাই আর সিভিল ১৮’র নিহাল কাধে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল প্রভোস্ট রুমে। আমি মাটিতে পা রাখার মতো অবস্থা বা জোর আমার পায়ে আর নেই।এর মধ্যেও রাফি আমাকে পেছন থেকে লাথি ঘুষি দিতে থাকে।
আমাকে প্রভোস্ট রুমে সোফায় বসানো হয় জোরপূর্বক। কারণ তখন আমার পা গুটিয়ে বসা খুবই কষ্টের ছিলো। ওরা আমাকে এভাবে বসিয়ে রাখার উদ্দেশ্য হলো যাতে আমি স্বাভাবিক আছি এটা পুলিশকে বোঝানো যায়। প্রভোস্ট রুমে হল প্রভোস্ট, সহকারী হল প্রভোস্ট ( সিএসই ডিপার্টমেন্টের লেকচারার সুনন্দ দাস)আর ছাত্রলীগের কুয়েট শাখার রশীদ হলের জানোয়ার গুলো ছিল।
আমি ওদেরকে অনুরোধ করলাম, ‘ভাই আপনারা আমাকে দরকার হলে একটা রুমে আটকে রাখেন কয়েকদিন আপনারা আমার ফোন আর ল্যাপটপ ও পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, আমার সাথে কারা যোগাযোগ করে বা আমি গোপন কোন কিছু বা শিবিরের সাথে জড়িত কিনা! আমাকে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে দিয়েন না। তারা বলে, না! তুই পুলিশের কাছে প্রমাণ করিস।
আমি প্রভোস্ট স্যার আর DSW এর ডিরেক্টর স্যারকে রিকোয়েস্ট করি— স্যার আপনি আমাকে বাঁচান! পুলিশে দিয়েন না। আপনি তো জানেন আমার সম্পর্কে । মামলা দিয়েন না আমার নামে। আমার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। অনেক অনুরোধ করা স্বত্বেও প্রশাসনিক এই লোকগুলোর আমার পক্ষে একটা শব্দও বলেনি। যদি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ওদের বিরুদ্ধে চলে যায় এই ভয়ে হয়তো।
আমি কোন ভাবেই ওনাদের কনভিন্স করতে পারছিনা দেখে বললাম, আপনারা আমাকে ছেড়ে দেন। আমি আর কখনোই কুয়েটে পড়তে আসব না। সব ছেড়ে চলে যাব। তবুও আমার নামে মামলা দিয়ে আমাকে জেলে পাঠাইয়েন না। আমার মা-বাবা পরিবার জানতে পারলে তারা বাঁচবে না। আমার পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। আমাকে তারা জেল থেকে ছাড়াতে পারবে না। সেদিন কোনো আকুতি কারো মন গলাতে পারেনি আমার জন্য।
ইসমাইল সাইফুল্লাহ স্যার জানত সবই। তবুও স্যার সন্ত্রাসীদের ভয়ে চুপ ছিলেন। কোনো কথা বলেন নি। আরো উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, গোপন সংগঠন থেকে আমি মাসে কত টাকা পাই! স্যারের এই কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই।
সুনন্দ দাস স্যার আমার ল্যাপটপ নিয়ে নেয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে। এবং উনি খুঁজতে থাকে আমার ল্যাপটপের প্রতিটা ফোল্ডার। চেষ্টা করতে থাকে আমাকে আর কোনোভাবে ফাঁসানো যায় কিনা। ওনার ব্যবহার এতোই বাজে ছিল যে উনি পারে না আমাকে প্রভোস্ট রুমে মারে।
যেম ছাত্রলীগের ভূমিকা উনি সেদিন একাই পালন করছিলেন। এরপর রুমে কী হচ্ছে না হচ্ছে, আমার আর কোন কথাই ছিলো না। ছাত্রলীগের নির্মমতা, নৃশংসতা ও পাশবিকতায় আর প্রসাশনের ভূমিকা দেখে আমি চুপ করে দেখে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলনা।
যারা আমার নিরাপত্তা দিবে তারাই আমার বিরুদ্ধে আমাকে দোষী বানাচ্ছে কুয়েটের তৎকালীন এই মেরুদন্ডহীন প্রসাশন। তখন ভাবতে লাগলাম, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আমার কুয়েটে পড়তে আসাটা।
হয়তো আজ এসবই ভূলের মাশুল। এর মধ্যে খান জাহান আলী থানা থেকে ৩/৪ জন পুলিশ প্রভোস্ট রুমে আসে। পুলিশ আসার পর প্রভোস্ট স্যার পুলিশকে ইনফর্ম করে আমি শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করছি, শিবির করি, আমি নিষিদ্ধ কোন সংগঠনের সাথে জড়িত।
তারপর এরা ছাত্রলীগের দেওয়া প্রিন্টেড কিছু মেসেজ হল প্রভোস্ট পুলিশকে দেখায়। পুলিশ দেখে বলে এসব যে ওর মেসেজ তার প্রমাণই বা কী! এই অভিযোগে তারা আমাকে এরেস্ট করতে পারবে না। একথা শোনার পর সেজান আর হল প্রভোস্ট হামিদুর রহমান, সহকারী হল প্রভোস্ট সুনন্দ দাস, ঐ পুলিশের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়ায়। তারা ঐ পুলিশের ওপর গরম হয়ে যায়।
তারা বলে, ছাত্রলীগ আর এখানে উপস্থিত কুয়েট প্রশাসনের কথা আমরা আপনাদেরকে অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন করছি। আপনারা আইনের লোক। আপনারা থানায় নিয়ে তদন্ত করে প্রমাণ করবেন। আপনারা কেন এধরনের কথা বলবেন?
এভাবে বাকবিতণ্ডা চলার পর ঐ সাব-ইন্সপেক্টর বলে, শুনেন! ধার্মিক হলে আর দাড়ি রাখলেই যদি কেউ শিবির হয়ে যায় তাহলে ক্যাম্পাসের মসজিদ মন্দির যা আছে সব ভেঙে দেন। কেউ আর ধার্মিকও হবেনা। আর শিবির করবেনা।
পুলিশ প্রভোস্ট রুমে প্রবেশ করার পর এতক্ষণ ধরে আমি কোন অভিযোগ বা কোন কিছুই পুলিশকে জানাইনি। সন্ধ্যা থেকে আমাকে ছাত্রলীগের জানোয়ার রূপী সন্ত্রাস গুলো কতটা নৃশংস ভাবে আমাকে নির্যাতন করেছে । তারপর পুলিশের মধ্যে কেউ একজন খেয়াল করে আমার মুখে রক্তের দাগ । তখন আমাকে জিজ্ঞেস করল ওনারা মুখে রক্ত কেন।
তারপর আমি ওনাকে বললাম স্যার আমার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমাকে মাগরিবের পর থেকে আপনারা আসার আগ পর্যন্ত অমানবিক ভাবে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগের এরা। এর মধ্যে তখন কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সেজান বলে, স্যার! ও ভং ধরছে। ওরে জাস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পোলাপান চড় থাপ্পড় দিছে। অবশ্য এই জানোয়ার খুনির কাছে এই টর্চার কিছুই না।
ঐখানে যে সিনিয়র সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন উনি আমার কাছে আসেন আমাকে দাঁড়ানোর জন্য বলে। আমি ওনাদের কে জানাইলাম স্যার আমার পায়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। আমার পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব না। পরবর্তীতে উনি আমার ট্রাউজার হাটু পর্যন্ত উঠায় এবং ছবি তুলে। গায়ের শার্ট খুলে পিঠের, হাতের ছবি তুলে। ওনারা আমার অবস্থা দেখে আমাকে থানায় নিতে অস্বীকার করে।
কোন মতেই আমাকে থানায় নিবেনা। খান জাহান আলী থানার ওসি স্যারকে ফোন দিয়ে আমার অবস্থা জানায় যে, স্যার ছাত্ররা ওরে অনেক টর্চার করছে। ওর অবস্থা খুবই খারাপ। আমার প্রায় পুরো শরীর কালো হয়ে গেছে। আমাকে থানায় নিয়ে গেলে কোন ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশ দায়ী হবে। ওসি স্যার সব শুনে নিষেধ করে দেয় আমাকে থানায় নেওয়ার জন্য।
আর ওসি স্যারকে উনি ছবি পাঠিয়ে দেয়। আমাকে কেন নিবেনা এসব নিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী গুলো হল প্রভোস্ট হামিদুল ইসলাম ও সহকারী হল প্রভোস্ট সুনন্দ দাস, পুলিশের সাথে অনেক জোড়াজুড়ি করে। তারপরও তাদেরকে রাজি করাতে পারেনি। ওনারা কোনোমতেই আমাকে থানায় নিবেনা বা এরেস্ট করবেনা।
তাদেরকে কোন ভাবেই রাজি না করাতে পেরে প্রশাসন আমাকে কুয়েটের এম্বুলেন্স দিয়ে এরেস্ট না করে পুলিশের হেফাজতে ২ জন পুলিশ ও রশীদ হলের সিকিউরিটি গার্ড সহ খুলনা মেডিকেল কলেজে পাঠায় চিকিৎসার জন্য। পুলিশ সাথে করে প্রিজন ভ্যান নিয়ে আসছিলো যেটা অডিটোরিয়ামের সামনে রাখা ছিল। আরো পুলিশের সদস্যরা ছিলো গাড়িতে।
হসপিটালে প্রায় রাত ২টার পর পৌছাই। আমাকে প্রিজন সেলে নেওয়া হলো। কিছুক্ষণ পর প্রিজন সেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আসলেন। উনি এসে আমার অবস্থা দেখলেন। হাতের পালস সহ স্বাভাবিক কিছু চেক করলেন। আমার কাছে জানতে চাইলেন কী হয়েছে! আমি সংক্ষেপে ওনাকে বললাম। তিনি শার্ট খুলে দেখলেন এবং পায়ের অবস্থা দেখলেন।
পরে উনি আমাকে সরাসরি বললেন, দেখ তোমার শারীরিক অবস্থা খারাপ। এখন এখানে তোমার সাথে কেউ নেই। অনেক বেশি টর্চার করার ফলে তোমার শরীরের রক্ত কালো হয়ে গেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো যে তুমি এখনো বেঁচে আছ। তোমার জাস্ট প্রাণটা আছে, বাহির দেখে দেখে যা মনে হচ্ছে ।
এখন ভেঙে পরলে হবে না। তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। কালো ব্লাড কিডনিতে জমাট হয়ে গেলে কিডনি ব্লক করে পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে মারাও যেতে পারো। এজন্য তোমাকে একটানা স্যালাইনের ওপর রাখতে হবে।
আর উনি আমাকে পরামর্শ দেয় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে স্যালাইন আর পানি পান করার ফলে কালো ব্লাডের পরিমাণটা একসাথে পরিশোধন হওয়ায় পানির সাথে কমে যায়। কালো ব্লাড একসাথে বেশি গেলে কিডনিতে জমাট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বেশি পানি পান করলে আর স্লাইনের কারণে ধীরে ধীরে কালো ব্লাডের পরিমাণটা কমে রক্ত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এইরকম ওনার মতো করে উনি বলল। এখন আমার যদ্দুর মনে পড়ে।
তারপর হসপিটাল থেকে স্লাইন নিয়ে আমার হাতে স্যালাইন সংযোগ করে দিয়ে কিছু ঔষধ দিয়ে ডাক্তার চলে যায়।
প্রিজন সেল থেকে সবাই চলে যাওয়ার পর সব কিছু কেমন দুঃস্বপ্নের মতো লাগছিল। ডাক্তার যা বলল তা যদি সত্যিই হয় বেচে থাকব কিনা যদি বেঁচেও যাই আমাকে কী ভাবে জেল থেকে মুক্ত করবে আর শারীরিক যে অবস্থা তাতে চিকিৎসার খরচ, আমার পরিবারের অর্থনৈতিক যে অবস্থা, টাকা পয়সা ম্যানেজ করবেই বা কীভাবে!
মা-বাবা ভাই বোন এর কথা খুব মনে পরছিল। তারাতো জানেই না যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ছেলেকে তারা পড়তে পাঠাইছে সেখানে তাদের ছেলে নির্মমতার শিকার হয়ে সেই জেলে বন্দী । আর সন্ত্রাসীরা দম্ভ করে বেড়াচ্ছে পরবর্তীতে আবার কাকে ধরবে সেই ষড়যন্ত্র করছে।
আমার পরিবার যখন আমার অবস্থার কথা শুনবে কী হবে কীভাবে নিবে— এই সব চিন্তা হচ্ছিল। একটা জিনিস খুব করে মনে হচ্ছিলো। কী নির্মমতার শিকার হয়ে আবরার ফাহাদ ভাই মারা গেলেন! তার প্রাণের বিনিময়ে বুয়েটে এখম কলুষিত ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলো।
সেলিম স্যার মারা গেলেন। কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ তো হলোই না। বরং মনে হয় সন্ত্রাসী গুলোর দম্ভ আরও বেড়ে গেছে। আমার প্রানের বিনিময়ে (আল্লাহ মাফ করুক) যেনো অন্তত ক্যাম্পাসে কুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাতে পারে। আর যেন কেউ আবরার ফাহাদ ভাই বা আমার মতো নৃশংসতার শিকার না হয়।
আলহামদুলিল্লাহ স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আমার কুয়েটের ভাই বোনেরা আন্দোলন করে কুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারছে। আলহামদুলিল্লাহ প্রায় ২ বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরে এই আন্দোলনে থাকার সৌভাগ্য আল্লাহ আমাকেও দিয়েছেন। মহান।ল আল্লাহ তা’আলার রহমতে সেই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
যারা আমাকে তখন দেখেছে এবং আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলে, আমি নাকি ২য় জীবন পার করছি। ২টা বছর নিজের মতো করে এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হয়তো এখনও পারিনি।
সেই দুঃস্বপ্নের রাত আর কারো জীবনে না আসুক।
আমার মামাতো ভাই তখন ইন্টারে পরে। ওরে আমিই নিয়ে আসছিলাম খুলনা। আমি হলে ওঠার পর ও ক্যাম্পাসের পাশে আমার ব্যাচমেটদের সাথে থাকত। সকালে ও জানতে পারার পর ১০ টার আমাকে দেখতে যায়। হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় খেতে পারছিলাম না। হাত ফুলে গেছে অনেক। কোন কিছু ধরার মতো অবস্থা নেই। পুলিশ ওরে ভেতরে আসতে দেয়। ও খাবার খাওয়ায় আমাকে। তারপর ওষুধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ আনে।
আমার পরিবার তারপর দিন সকালে জানতে পারে আমার অবস্থা। সারাদিনের কোন কথাই এখন আর আপাতত মনে পড়ছে না। কী একটা ট্রমার মধ্যে দিন কাটল। বাথরুম এ যে যাবো— ডান পায়ের যা অবস্থা! বাম পায়ে কোন ভাবেই ভর করা বা নাড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না।
যে ৪ রাত ৩ দিন প্রিজন জেলে ছিলাম, আমার শারীরিক অবস্থা এতটা খারাপ ছিল যে, নিজের মতো করে চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া করতে পারতাম না। এ অবস্থা দেখে প্রিজন সেলের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পরবর্তী ৩ দিন আমার সাথে প্রিজন সেলে আমার খালাতো ভাই, চাচা, মামাতো ভাই— ওরা ৩ জনই আমার দেখাশুনা করার জন্য ১ দিন করে প্রিজন সেলে আমার সাথে বন্দী থাকে।
বিকেলের মধ্যেই ভাই, চাচা ও খালাতো ভাই খুলনা আসে। প্রিজন সেলের দড়জার সামনে দাড়িয়ে আমার বড় ভাইয়ের যেই হাহাকার-কান্না আর অসহায়ত্ব দেখলাম— কোন ছোট ভাই তার বড় ভাইকে এভাবে দেখতে চাইবেনা।
কুয়েট অথোরিটি কোন প্রকার তদন্ত না করে বা আমার সাথে কোন কথা না বলেই তারপরের দিন বিকেলের মধ্যে আমার নামে ছাত্রলীগের সাজানো নাটকে মামলা করে দেয়। মামলার বাদি হয় কুয়েটের সিকিউরিটি ইনচার্জ সাদেক হোসেন প্রামাণিক ( যে আবার কুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি কুখ্যাত সন্ত্রাসী নয়নের আপন বড় ভাই)। আর মামলার সাক্ষী হয় হল প্রভোস্ট হামিদুল ইসলাম ও সহকারী হল প্রভোস্ট সুনন্দ দাস।
আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় খান জাহান আলী থানার ওসি স্যার এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চেয়েছিলো পুলিশি হেফাজতে কিছু দিন আমার চিকিৎসা করাতে। ১৪ তারিখে আমাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে হাত এবং পায়ের এক্সরে এবং রক্ত পরীক্ষা সহ আরও কী একটা পরীক্ষা করা হয়। কোন ফ্রাকচার হয়নি এটা জানানো হয় শুধু। অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমার পরিবারকে আমার কোন মেডিকেল ডকুমেন্টস, এক্সরে রিপোর্ট ও টেস্টের রেজাল্ট পেপার, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশ— কিছুই দেখানো হয়নি।
হয়তো ওপরের কোন নির্দেশনা ছিলো! ডাক্তার যেই ওষুধ প্রেসক্রিপশন করত তা জানিয়ে দেয়া হতো।
১৫ই সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রিজন সেল কর্তৃপক্ষ জানায় ৫ টার আগেই আমাকে আজই কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারপর সেখান থেকে খুলনা জেলা কারাগারে। এই ৩ দিনে হাতের অবস্থা উন্নতি হয়েছ কিছুটা কিন্তু পায়ের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে মনে হচ্ছে।
একবার চিন্তা করুন একটা মানুষকে পায়ে এতটা টর্চার করা হয়েছে সে হাঁটতে পারছেনা, তাকে কয়টা দিন চিকিৎসা না নিতে দিয়ে জেল খানায় পাঠাতে হবেই— সে এতো বড় ক্রিমিনাল!
সেদিন আমার খালাতো ভাই আমি যেন অন্তত কারও সহযোগিতা ছাড়া নিজের মতো হাটতে পারি সে জন্য স্ট্রেচার কিনে নিয়ে আসে। স্ট্রেচার না থাকলে যে কারাগারে আমার চলাফেরা করতে কি অসুবিধা হত আল্লাহ তা’আলাই জানেন। সম্ভবত কারাগারে যাওয়ার ৩০-৩৫ দিন পর স্ট্রেচার ছাড়া মোটামুটি নিজের মতো করে হাটতে পারছিলাম।
১৫ তারিখ বিকেলে আমাকে এরেস্ট দেখিয়ে কোর্টে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছোট মামা চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় আসে। সবাই অনেক চেষ্টা করছিল আমাকে যেন কারাগারে না পাঠিয়ে বাহিরে রেখে চিকিৎসা করাতে পারে। কিন্তু পারেনি কোনভাবেই।
যেদিন আমাকে কোর্টে নিয়ে কয়েদখানায় রাখা হয় সেদিনই আমি জীবনে প্রথমবার মামার চোখে পানি দেখতে পাই। আর ২য় বার দেখি কারাগারে যাওয়ার ২১ দিন পর যেদিন আমার জামিন না-মঞ্জুর করে দেয় কোর্ট থেকে। সেদিন মামা কারাগারে সাক্ষাৎ রুমে কান্নার জন্য আমার সাথে কথা বলতেই পারছিল না। আমাদের দূরসম্পর্কের এক আত্মীয় ছিলো উনিই আমার সাথে কথা বলছিলো(যিনি আমার মামলা সংক্রান্ত বিষয় তদারকি করতেন)
আমি এমনিতেই তখনকার অবস্থা মেনে নিতে পারতাম না কোনভাবেই। এসব ভেবে জেলে সারাদিন কান্না কাটিই করতাম বেশিরভাগ সময়। এমনও হত কান্না করতে এত মাথা ব্যাথা হতো কখন যে ঘুম চলে আসত খেয়ালই থাকতনা।
ছোট মামার কান্নায় সেদিন সাক্ষাৎ রুমে এত বেশি জোরে জোরে কান্না করছিলাম যে সাক্ষাৎ রুমের সবাই অবাকই হুয়েছিলো!
তারপর আমাকে জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আমাকে যে টর্চার করা হয় এর নেতৃত্বে লেদার 17 এর রায়হান আর লেদার 18 এর রাফি দেয়। রাফি হয়ে যায় আস্থাবাজন। পরবর্তীতে এই সুবাদে রাফি হয়ে যায় রশীদ হলের সমন্বয়ক। আর রায়হান জানতো কিছুদিন পরই কুয়েট ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করার জন্য সম্মেলন হবে। ওর দরকার ছিল এমন কিছু করা যেটার মাধ্যমে হাইলাইটস হয়ে কুয়েটের নতুন কমিটিতে ওর পদ পাওয়া সহজ হবে।
ছাত্রলীগের কমিটির পদ পাওয়ার অন্যতম শর্ত কে কতটা নিষ্ঠুরতার পরিচয় দতে পারে এটা শো করা। যেটা সেদিন আমার মাধ্যমে রাফি তখনকার রানিং কুয়েটের কমিটিকে ভালো ভাবেই তা দেখাতে পারে। মাঝখানে ধ্বংস হয়ে যায় আমার লাইফ আর একাডেমিক ক্যারিয়ার।
*ছাত্রলীগের করা অভিযোগ এ কুয়েট প্রশাসনের করা মামলায় আমি ৩ মাস আগে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মামলা থেকে নিষ্পত্তি পাই।
এখানে যে নামগুলো দেয়া আছে তারা সবাই-ই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ ঘটনার সাথে জড়িত—
সাদমান নাহিয়ান সেজান- ১৩০৭০২৪ CSE’13
রায়হান আহম্মেদ – ১৭১৯০৫৮ LE’17
সাজেদুল করিম বাপ্পি – ১৬০১০৭৭ CE’16
ফখরুল ইসলাম ফারিস – ১৭২৩০৪৮ BECM’17
LE 18
আদনান রাফি -১৮১৯০৫৯
রেজওয়ান ইসলাম রিজভী – ১৮১৯০৩৭
মোস্তাক আহমেদ তুষার – ১৮১৯০৪৭
সিরাজুম মনি রুপক – ১৮১৯০৩৮ TE’18
মেহেদী হাসান মিঠু – ১৮২১০৩৯
ফুয়াদুজ্জামান ফাহিম – ১৮২১০৫৩
সাফাত মোরশেদ – ১৮২১০৪৮
ফারিয়ার জামিল নিহাল – ১৮০১১২০. CE’18 (ও আমাকে মারেনি কিন্তু পরোক্ষভাবে জড়িত)
My spouse and I stumbled over here from a different page and thought I might as well check things out. I like what I see so now i’m following you. Look forward to looking over your web page again.
https://telegra.ph/Istoriya-formata-MP3–revolyuciya-v-mire-cifrovoj-muzyki-03-13
I have recently started a site, the info you offer on this site has helped me greatly. Thank you for all of your time & work.
Awesome https://is.gd/tpjNyL
https://myteana.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6748
http://terios2.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=4700
http://terios2.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=4629
http://terios2.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=4788
https://vitz.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=5045
http://wish-club.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=5283
https://vitz.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=4864
https://honda-fit.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=7116
https://myteana.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6686
https://hrv-club.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6935
https://mazda-demio.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6603
http://wish-club.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=5502
http://toyota-porte.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=3404
МАЧЕТЕ – Твоё отражение скачать и слушать песню https://shorturl.fm/JNlh6
Artik & Asti feat. Артем Качер – Грустный дэнс (Remix) скачать и слушать онлайн https://shorturl.fm/4NN5C
Мираж – Безумный мир скачать mp3 и слушать бесплатно https://shorturl.fm/TDO4b
Слава Благов – Линии скачать песню в mp3 и слушать онлайн https://shorturl.fm/mpiup
Денис Майданов – 48 часов (Radio Edit) скачать песню бесплатно в mp3 и слушать онлайн https://shorturl.fm/uNtAO
Юрий Антонов – От печали до радости скачать и слушать песню бесплатно https://shorturl.fm/SyT92
Елена Темникова – DAIMNE.LOVE скачать песню и слушать онлайн https://shorturl.fm/qpmLt
Моя Мишель, Баста – Не поняла скачать mp3 и слушать онлайн бесплатно https://shorturl.fm/UMTUp
Deesmi & Onlife – Влюбился В Нее скачать песню в mp3 и слушать онлайн https://shorturl.fm/W88RN
https://mazda-demio.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6547
https://myteana.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6869
https://mazda-demio.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6578
https://vitz.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=5074
http://terios2.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=4849
https://mazda-demio.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=6387
https://honda-fit.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=7091
Андрей Лебедев – Слайд скачать и слушать песню бесплатно https://shorturl.fm/KtEKu
Максим Круженков feat. ВИА Гра – Попытка Номер 5 скачать песню бесплатно в mp3 и слушать онлайн https://shorturl.fm/lQzjG
Игорь Аравский – Пластинка Юности Моей скачать бесплатно и слушать онлайн https://shorturl.fm/ks6KO
Esco, Baga – Она та дама скачать mp3 и слушать онлайн бесплатно https://shorturl.fm/YhK8P
Потап и Настя – Папа вам не мама скачать бесплатно mp3 и слушать онлайн https://shorturl.fm/dNOwy
Лисицын – По Волнам скачать и слушать mp3 https://shorturl.fm/muiPb
Бабек Мамедрзаев – Принцесса скачать песню и слушать онлайн https://shorturl.fm/ef3SE
Бабек Мамедрзаев – Принцесса скачать песню и слушать онлайн https://shorturl.fm/ef3SE