টর্চার সেল কুয়েট: লালনশাহ হল (১ লা মে, ২০১৭ইং)
List Of Alleged Persons (Name – Roll – Dept)
1) Ali Imtiyaz Shohan (ME-8)
2) singdho shuvo(IEM’13)- 1311045
3) Md. Asaduzzaman (Joy Baba) (CE-13)
3) Sadman Nahian Sezhan (CSE-13)-1307024
4) Zayed Rahman (URP-12) .
5) Tanvir Redwan Moon (IEM-14) https://www.facebook.com/incridibletanvir?mibextid=LQQJ4d
6) Reshad Rahman (CE-14)
7) Shikto (CE-14) https://www.facebook.com/ishmam.shikto?mibextid=LQQJ4d
8) Ali Ibnul Sunny (IEM-11) ( https://www.facebook.com/share/F31dHskz86u9QTSm/?mibextid=LQQJ4d
সারারাত (সন্ধা থেকে ভোর) ছাত্রলীগ নামক হায়নাদের বর্বর নির্যাতনের শিকার ছিলাম আমি মো: মোজাহের হোসেন (সোহান) Batch: TE-15 । আজকে শেয়ার করবো আমার সাথে ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত কুয়েটের নৃশংস বাস্তব সেই পৈশাচিক ঘটনাবলী।
ঘটনা: ১
গত ১ মে , ২০১৭ ইং কুয়েটের মাটিও যে আবরার ফাহাদের মত রক্তাক্ত হয়েছিল, তা অবশ্যই আপামর সমস্ত ছাত্রসমাজ এবং পুরো জাতি জানার অধিকার রাখে। আর এই সব মুখোশধারী শয়তানের ছবি গুলো দেখে অনেকে অবাকেই হবেন, যে এর দ্বারা ও এই জঘন্য কাজ সম্ভব হয়েছিল! আমি নিজেও তখন অবাক হয়েছি তাদের প্রকৃত হিংস্র মুখ গুলো দেখে। দেখে রাখুন এদের পেছনের খোলশ । এক আবরার ফাহাদের হায়াৎ ছিল না বলে হয়তো সে সেইদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুক।
আল্লাহর অশেষ মহিমায় সেই বিভীষিকাময় রাতের নৃশংস, নির্মম , নির্দয় এবং বর্বরোচিত কুয়েট লালন শাহ হলের গেস্টরুম নামক ভয়ঙ্কর টর্চার সেল থেকে সারারাতের অপ্রত্যাশিত নির্যাতনের শিকার ছিলাম আমি নিজে সহ URP-14 Batch এর লুৎফর ভাই।
অন্য সবার মত খুব স্বাভাবিকভাবেই ক্লাস-ল্যাব শেষ করে আমি অমর একুশে হলের পশ্চিম পাশের গণরুমে নিজের আসনে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই। যদিও আমার সংযুক্ত হল ছিল লালন শাহ হল । নিজ ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই Shuvo- (TE-2K12 ) ভাই কে অনুরোধ করে অমর একুশে হলের গণরুমে সাময়িক সময়ের জন্য ১টা সিট এ উঠি। খুব সাধারণত আমি বিকেল টাইমে একটু সময় পেলে কুয়েট সেন্ট্রাল ফিল্ডে এ চলে যেতাম । সেদিনও এর ব্যতিক্রম কিছু ছিল না। যেহেতু স্পোর্টস আমার শখের মধ্যে অন্যতম ছিল । বলতে গেলে ক্যাম্পাসে সবার কাছে এক পরিচিত মুখই ছিলাম ।
২০১৫-২০১৭ সালের এই সময়টা ক্যাম্পাসে আমার খুব ভালভাবেই কাটছিল। বিশেষ করে যেকোনো ধরনের খেলাধুলা (ক্রিকেট, ফুটবল, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, হল টুর্নামেন্ট ইত্যাদি) ভার্সিটি ডে, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন ইভেন্টে আমি সর্বদা সক্রিয় ছিলাম। এমনকি BNCC এর সদস্যও ছিলাম। এই সব ইভেন্টগুলোয় আমার সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে #লালন_শাহ হল বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জন করেছিল। সবাই তখন কম-বেশি আমাকে যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছিল।
এমনকি হল টুর্নামেন্টে শেষ বলে ৪ মেরে রশীদ হল কে হারানোর আনন্দে সেন্ট্রাল ফিল্ডে তৎকালীন কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক Ali Imtiyaz Shohan (ME-08) (ID Deactivated) আমাকে তার ঘাড়ে তুলে নিয়ে কিছুক্ষণ আনন্দ মিছিল করে। পরবর্তীতে উক্ত হলের অন্যান্য ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশেষ করে Tanvir Rezwan Moon (IEM-14) আমাকে তার ঘাড়ে করে আনন্দ মিছিল করতে করতে হল পর্যন্ত পুরো সময়টা উপভোগ করে ।
এর কিছুদিন পর যে ১মে, ২০১৭ সারারাত কুয়েট এর এই ছাত্রলীগ নামক নরপশুরা আমাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে এমন বর্বর নির্যাতন করবে, তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। পরিচিত সবগুলো লেবাসধারী শয়তানী মুখোশগুলো আমার কাছে তখন এক এক করে প্রকাশ পায়।
ছোটবেলা থেকেই আমার নিয়মিত নামাজের অভ্যাস ছিল। যখনই যেকোনো পরিস্থিতিতে থাকিনা কেন, অন্তত নামাজের সময় নামাজ টা পরে নিতাম। এমনকি খেলা চলাকালীন সেন্ট্রাল ফিল্ডের এক কোণে গিয়ে নামাজটা পড়ে নিতাম । কোনোরকম নেশা এবং অপ্রয়োজনীয় কোনো আড্ডাই দিতাম না কোথাও। আবার তাবলীগও করতাম না। এগুলোও নরপশুরা অনসরণ করেছে। এগুলো নাকি শিবির করে যারা তাদেরই চিহ্ন।
রাত ৯.৩০ এর দিকে আমার বেডে এসে Rudranill Singha, IEM ’13 (সর্বশেষ কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি) এর নেতৃত্বে ৮-১০ জন গুন্ডাবাহিনী আমাকে বেড থেকে তুলে নিয়ে যায়। তখন তাদের আচরণ খুব স্বাভাবিক এই ছিল। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে ! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! কিছু বলার এবং জানার থাকলে এখানেই বলেন।
Rudranil Singha (IEM’13) এবং Tanvir Redwan Moon (IEM-14) আমাকে ২ পাশে দুজন ঘিরে রেখে লালন শাহ হলে নিয়ে যেতে চায়, তারা বলে তোর কোন সমস্যা নাই, তোর ব্যাপারে কিছু কথা উঠেছে। তুই সব বলে দে, তোরে কেউ ১টা আঁচড়ও দিতে পারবে না। লুঙ্গি পরা ছিলাম, বললাম ভাই পেন্ট টা পরে নেই। তারা পেন্টাও পড়তে না দিয়ে , টানতে টানতে লালন শাহ হলের ১০৪ নম্বর রুমে নিয়ে আসে।
যখন #অমর হল থেকে #লালন হলে তারা নিয়ে আসছিল, তখন ধাপে ধাপে অদ্ভুত কিছু ভয়ঙ্কর চিৎকারের শব্দ ভেসে আসছিল আমার কানে। একটা মানুষকে কতটা নৃশংসভাবে আঘাত করলে এমন চিৎকার শুনা যায়, তা আমি তখন কিছুটা অনুভব করতেছিলাম। মনে মনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছিলাম , যে আল্লাহ এগুলো কী হচ্ছে সব। তখনও জানি না লালনের ভেতরে গেস্ট রুম নামক টর্চার সেলে কার সাথে এমন অমানবিক পাশবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
এই সময় নরমালি তৎকালীন হল প্রভোস্ট অথবা এসিসটেন্ট প্রভোস্ট অফিসে থাকার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের কাউকেই সেখানে দেখতে পেলাম না । শেষ আশা তারাই ছিল ভাবছিলাম। কোন অপরাধ করে থাকলে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে এমনটা চিন্তা করাটাও আমার ভুল ছিল। পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল লালনের ১০৪ নম্বর রুমে। গেষ্ট রুমের সেই আত্মচিৎকার আমার কাছে তখন আরও স্পষ্টভাবে কানে বাজছিল।
হলে ডুকার পর আমার Textile ১৫ ব্যাচের বন্ধুরা (Faysal Habib, Shakhwr Das, Kamrul Islam, Anannyo Aditya Dey, Swakhar Das ) ওদের হাত থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল । এমনকি তারা আমার জন্য কান্না জড়িত কণ্ঠে তাদের পা পর্য্যন্ত ধরার চেষ্টা করে অনুরোধ করছিল । কিন্তু আকুতি মিনতি কোনোভাবেই গ্রহণ করেনি, এই নরপশুরা।
এর কিছুক্ষণ পরেই টর্চারের প্রাথমিক পর্ব শুরু করে আমার সাথে । Rudranil Singha (IEM’13) (ID Deactivated ) আমাকে হ্যান্ডওভার করে দেয় Md. Asaduzzaman (Joy Baba) (CE-13) https://www.facebook.com/Md.Asaduzzaman.Joy এর হাতে। এই প্রাথমিক টর্চারের মূল হোতা ছিল Md. Asaduzzaman (Joy Baba) (CE-13) https://www.facebook.com/Md.Asaduzzaman.Joy তাদের জেরার শুরুতেই #জয়_বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করে , তুই হলের জন্য অনেক করছস, তোকে আমরা কেউ কিছু করতে চাই না। তুই শিবির করস কিনা বল, তোর সাথে আর কে কে আছে !
তাদের সবার ডিটেইলস বল। আমি বললাম ভাই, আমাকে শিবির কীসের উপর ভিত্তি করে বলছেন! এমন কিছুর সাথে আমি জড়িত নই। আমি যদি এইরকম কিছু করেই থাকি, প্রমাণ দেন। নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত পড়ি বলেই শিবির হয়ে গেলাম? তাহলে তাবলিগও করিস না, লিগ ও করিস না! বলেই সজোরে ডান হাত দিয়ে JOY Baba (CE-13) আমার দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে নৃশংস নির্যাতনের যাত্রা শুরু করল। আমাকে Tanvir Redwan Moon (IEM-14) টর্চার করেনি(কিন্তু Lutfar Rahman (URP-14 কে অমানবিক টর্সার করেছিল, পরে আমাকেও টর্চার করছে) , কিন্তু আমাকে বুজানোর চেষ্টা করেছিল যে, তোর সাথে শিবিরের আর কে কে আছে।
তাদের সবার নাম বল। কেউ কিছু করবে না। এই কথা বলার মাঝে সেই Joy Baba (CE-13) আবারও সজোরে ৫-৬ টা টানা থাপ্পর বসায় দিল গালে এবং কানের নিচে । এতে আমি খানিক সময় কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। তারা কী বলছে তাও না। তাদের রিকোয়েস্ট করেছিলাম, ভাই আপনারা আমাকে শুধু শুধু মারতেছেন। আমাকে আপনারা ভুল বুজতেছেন। হলের জন্য এত কিছু করলাম, আর আপনারা আমাকে এর প্রতিদান দিচ্ছেন! কোন কিছুই তাদের মনে ধরছিল না ।
তাদের কে দেখে মনে হচ্ছে , তারা অনেকদিনের ক্ষুধার্ত কিছু জন্তু জানোয়ার। পরবর্তীতে Shikto (CE-14) উনি আমাকে ধরে রাখে যাতে নড়াচড়া করতে না পারি আর #জয়_বাবার বৃষ্টির মত থাপ্পড় গুলো টানা চালাইতেই থাকে। এর মধ্যে তাদের অশ্লীল ভাষায় অকথ্য গালিগালাজ চলমান থাকে। এইরকম প্রায় অমানুষিক ২০-২৫ টা থাপ্পড় শেষ করে সে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে তার প্রাথমিক টর্চারের কার্যক্রম সেখানেই শেষ করে দেয়। আমি অনেকক্ষণ ধরে কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। কোন কাজ হচ্ছে না দেখে এই হায়নারা এর কিছুক্ষণ পরেই আমাকে সেই ভয়ংকর গেস্টরুম নামক টর্চারসেল এ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
নেওয়ার সময় আমার পরনে লুঙ্গি ছিল। তখন কেউ একজন বলল লুঙ্গি চেঞ্জ করে নিতে। তখন একজন ওই রুমের কারও আধোয়া ময়লা একটা জিন্স প্যান্ট খুঁজে আমাকে পড়তে দেয়। কোমরে পেন্ট হচ্ছিলনা বলে হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলাম। বেল্ট চাইছিলাম ১টা, তারা দিতে না পেরে ১টা রশি দিছিল বেঁধে নেওয়ার জন্য। তখনও জানতাম না ভেতরে ওরা কার সাথে এমন নির্দয়ের মত নির্যাতন করে যাচ্ছে । তার এই করুন আত্মচিৎকারে পুরো ক্যাম্পাসের আকাশ বাতাস ক্রমশই ভারী হচ্ছিল । অনুমান করলাম আমার জন্য হয়ত সেইরকম কিছুই অপেক্ষা করছে। কোমরে রশিটা কোনোরকম বেঁধে প্রবেশ করলাম সেই টর্চার সেল নামক দুনিয়ার জাহান্নামে।
ভেতরে ডুকতেই আমি যা দেখেছি , তা দেখে আমি রীতিমত কিছুটা ঘাবড়ে যাই। এমন তরতাজা একটা মানুষকে এই নরপশুরা মুহূর্তের মধ্যেই নিথর করে দিল! ওনাকে আমি তখনও চিনতে পারিনি । শুধু দেখেছি , ফ্লোরে তার এই নিথর দেহখানি নিস্তব্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় সোজা চিত হয়ে শুয়ে আছে। এতটাই নির্যাতন করেছে যে, নড়াচড়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। দেখে মনে হল, মৃত কোন লাশ নির্দয়ভাবে পড়ে আছে। আমার জন্য বাকি হায়নারা অপেক্ষায় ছিল কখন তাদের স্ট্রিম রোলার এর কাজ শুরু করবে। যাবতীয় সকল দেশীয় অস্র প্রস্তুত ছিল তাদের।
তার মধ্যে ছিল হকিস্টিক, স্ট্যাম্প (কয়েকটা ভেঙ্গে ফেলছে ওনাকে #Lutfor Rahman -URP14 কে মারতে মারতে), জি আই পাইপ, শক্ত লাঠি ইত্যাদি। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কুয়েট ছাত্রলীগ এবং সাবেক উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ Ali Imtiyaz Shohan (ME-8) (ID Deactivated) এর নেতৃত্বে শুরু হয় নির্যাতনের সেই স্ট্রিম রোলার।
Rudranil Singha (IEM’13) এসে আমাকে বললো, “শোন তরে দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছে, তুই হলের জন্য অনেক করছস, তাই আসছি। তুই যে শিবির করস এটা স্বীকার কর, আর কে কে আছে তাদের ডিটেইলস বল। তাইলে আমি বলে দিলে, এরা তোরে ছেড়ে দিবে এবং কেউ কিছু করবে না ।”
আমি এটা শুনে বুঝলাম, তারা আমাকে জেরার নামে মানসিক নির্যাতন করতেছে। তখন আমি বললাম না আমি শিবির করি , না অন্য কারও বিষয়ে কিছু জানি। অস্বীকার করলাম কেনো, কেন তাদের কথা মেনে নিচ্ছি না এই অপরাধে তখন Ali Imtiyaz Shohan (ME-8) এর আপন ছোট ভাই সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক কুয়েট ছাত্রলীগ Ali Ibnul Sunny (IEM-11) ( https://www.facebook.com/share/F31dHskz86u9QTSm/?mibextid=LQQJ4d
শুরু করে তার এলোপাতাড়ি জঘন্য পাশবিক সব নির্যাতন।
এরা সবাই প্রত্যক্ষভাবে Joy Baba (CE-13), Shikto (CE-14) https://www.facebook.com/ishmam.shikto?mibextid=LQQJ4d,
Tanvir Redwan Moon (IEM-14) https://www.facebook.com/incridibletanvir?mibextid=LQQJ4d,
Reshad Rahman (CE-14) https://www.facebook.com/reshad.rahman0?mibextid=LQQJ4d
স্ট্যাম্প দিয়ে ক্লান্ত হওয়ার আগ পর্য্যন্ত পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে ঘাড় পর্য্যন্ত অমানবিক টর্চার করে।
সাথে চড়-থাপ্পড় চলমান ছিল। একজন হাপিয়ে উঠলে পালা বদল করে আরেকজন এর কাছে স্টাম্প দেয়। এভাবে ২-৩ টা স্টাম্প ভাঙ্গা হয়েছিলো আমার উপর। এক পর্যায়ে স্ট্যাম্প গুলো ভেঙ্গে যাওয়ার ধরুন জিআই পাইপ দিয়ে কোমর থেকে নিচের পুরো অংশ টার্গেট করে তারা তাদের পাশবিক টর্চারের ধারা অব্যাহত রেখেছিল। এর পরের ধাপে তারা ফ্লোরে চিত করে শুইয়ে দু পা এবং দু হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল যেন কোনোরকমে নড়তে না পারি।
এইভাবে পায়ের তালুতে তারা সজোরে Stump and জিআই পাইপ দিয়ে টানা প্রায় ১০-১৫ মিনিটের উপর আঘাত করে যেতে থাকে। আমার পাশে পড়ে থাকা নিথর দেহটাকে (লুৎফর ভাই :URP-14 ) জোরপূর্বক উঠিয়ে আবারও সেই পাশবিক নির্যাতন চালায় এই অসভ্য হায়নারা। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় ওনারে চিনি কিনা। বললাম অন্য সবার মত উনি হলের বড় ভাই, সেই হিসেবেই জানি। আমার একটা অভ্যাস ছিল , দল মত , ধর্ম -বর্ণ বিশেষ সবার সাথে মিশতাম ।
উনার সাথে পরিচয়ের বিষয়টা ব্যতিক্রম কিছু না। তারা কোনোভাবেই তা বিশ্বাস করতে চায়নি। এর মধ্য সিনিয়র পলিটিক্যালরা কিছুক্ষণ পর পর এসে মারার ডিরেকশন দিয়ে কিছুক্ষণ জেরা করে চলে যান। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন Ali Imtiyaz Shohan (ME-8), Rudranil Singha (IEM’13), Zayed Rahman (URP-12) .
তাদের তীব্র আঘাতে আমার বাম হাতের elbow এর একটু নিচে পেটে গিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এতে সবাই কিছু টা ঘাবড়ে গেলেও , পাশে থেকে কে যেন বলছিল, এটা কিছু না। ওরে আরও মারা লাগবে , বলেই কেউ একজনের কোমর থেকে Ali Ibnul Sunny (IEM-11) বেল্ট খুলে নিয়ে চাবুকের মত পিঠে এবং পেটে নিদারুকভাবে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। পাশের Lutfor Rahman (URP-14) ভাই কোনোভাবে দাঁড়াইতেই পারতেছিল না, তারপরেও ওরা ২-৩ জন জোর করে ধরে দাঁড় করিয়ে বেল্টের অত্যাচার থেকে রেহাই দেয়নি।
আমাদের চিৎকারের শব্দের চেয়ে স্ট্যাম্প, জি আই পাইপ এবং বেল্ট দিয়ে মারার শব্দটাই পুরো হলে প্রায় একধরনের ভয়ানক কম্পন তৈরি করছিল ।চোখ- মুখ এবং সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথায় আমি ঝাপসা দেখা শুরু করলাম । এক পর্যায়ে মনে মনে আল্লাহকেই স্মরণ করেছি যে, এক হইলে মরণ দিয়ে দাও , না হয় মুক্ত করে দাও এদের থেকে। হলের অনেককেই দেখলাম গেস্ট রুমের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে কি রঙ্গ মঞ্চ হচ্ছে আমাদের সাথে । একপলক দৃষ্টিতে দেখেই চলে যাচ্ছে। পরোক্ষণে তারা ব্যর্থ হয়ে আমাকে দিয়ে Lutfor (URP-14) bhai কে মারানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।
এইভাবে যেতে যেতে ফজর এর আজান দিয়ে দেয়। এর পরে সবাই আমাদের দুজনকে গেস্টরুম নামক টর্চার সেলে একা রেখে যায়। আমরা দুজনই না পারতেছিলাম বসে থাকতে, না পারতেছিলাম শুয়ে থাকতে । প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছিলাম তখন। এর মধ্যে আমার ডিপ্টার্টমেন্টের বন্ধু Faysal Habib (TE-15) আমাকে এসে তার রুমে খাটে নিয়ে যায়। তখন আমার মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছিল না প্রচন্ড কাঁপুনির কারণে।
বন্ধু Faysal Habib কে বলি একটা কম্বল দিয়ে আমাকে চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখতে । ও বুজতে পারল যে আমার পুরো শরীর প্রচণ্ড ঝরে কাঁপতেছে। সাথে সাথেই ও কম্বল দিয়ে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখছে। তখনই মনে পড়ল ফজর তো পড়া হয় নাই। তখন ওই অবস্থায় তায়ামুম করে নামাজ টা অনেক কষ্টে বসে বসে পড়ে নিলাম। তখন একটু শান্তি লাগছিল বেঁচে আছি বলে। এই হায়নারা আমাদের সাথে সারারাত এইসব করেও ক্ষান্ত হয় নি , তাদের তৃষ্ণাও মেটে নি। আমাদের দুজনকেই তাদের ঘাড়ে ভর করে নিয়ে যায় বঙ্গবন্ধু হলের গেস্ট রুমে।
অন্যান্য হলেও যে এই নরপশুরা এই জঘন্য কাজ আরও কারও সাথে করেছে তা তখন জানতে পেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমার মত বিধ্যস্থ আরও ৯-১০ জন পড়ে আছে । তখনও ওই হায়নাদের একজন কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক Sadman Nahian Sezzan (CSE-13) তারই জুনিয়র Abdul Alim (CSE-14) ভাইয়ের উপর লাথি-ঘুষি সহ এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দিতে থাকে ।
এতক্ষণে পুলিশ বঙ্গ হলের গেষ্ট রুমে প্রবেশ করে। আর আমাদের ১১ জনের মত সবাইকে শিবির নাশকতাকারী এবং জঙ্গী বলে সম্মোধন করে। এর পর সেই স্বৈরাচারের পা চাটা পুলিশ আমাদের সবাইকে একে একে গাড়িতে তুলে নিকটস্থ ১ টা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে খানজাহান আলী থানার গারদে নিয়ে যায়। আমাদের সবার নামে রাষ্ট্রদ্রোহীর ১টা মামলা দেওয়া হয়। পরের দিন খুলনা জেল হাজতে আমাদের সবাইকে চালান করে দেওয়া হয়।
( উল্লেখ্য যে আমার সাথে নির্যাতনের শিকার Lutfar Rahman (URP-14) কয়েক ধাপে বমি করতে থাকে, পরে তাঁকে জেলারের অনুমতিক্রমে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তার ২টি কিডনী প্রায় ডেমেজ হওয়ার পথে ছিল। নিয়মিত ডায়লাইসিস ওনাকে নেওয়াই লাগত।
পুরো ১ মাস জেলখানায় আমাদের শরীরের এত আঘাতের চিহ্ন দেখে জেলখানার সকল আসামিরা রীতিমত হতবিম্ব হয়ে উঠে। এই ১ মাস আমরা তীব্র ব্যাথার যন্ত্রণায় কাটিয়েছি জেলখানায়।এখনও সেই মিথ্যা মামলার বোঝা নিয়ে হাজিরার দেওয়ার জন্য দৌড়াতে হচ্ছে মাসের পর মাস খুলনা জেলা জজ কোর্টে ।
ব্যথানাশক ইনজেকশন দিয়েই চলেছে আমাদের ট্রিটমেন্ট।সেই দিন থেকে কুয়েটের প্রতিটা মুহূর্ত, সেকেন্ড আমার জন্য ছিল এক অজানা আতঙ্কের । পরিশেষে আল্লাহ এত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েও যে এখন ভালো এবং সুস্থ রেখেছেন। এর জন্য মহান আল্লাহর নিকট লাখো কোটি শুকরিয়া।
ঘটনা -০২
সেদিন ছিল ২৪ শে মার্চ ২০১৯। ক্যাম্পাসে আবার একটা ঝামেলা হয়। Mahadi vai (IEM 14) কে টর্চারের মাধ্যমে আবার ক্যাম্পাসে নতুন সমস্যা তৈরী করে তৎকালীন ছাত্রলীগ। সেই সূত্র ধরে, আরো ৩ জনকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়, পুলিশে দেয়া হয় একই কায়দায়। আবারো নতুন করে ঘাটাঘাটি শুরু হয় আমাকে নিয়ে। আমি তখন ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে থেকেই ক্লাস-ল্যাব করতে আসতাম ক্যাম্পাসে। ঝামেলার সময় ক্যাম্পাসে ছিলাম না।
বাইরে থেকে ঝামেলার খবর শুনে সতর্কতার জন্য আর ক্যাম্পাসের দিকে আসলাম না। পরের দিন ফেসবুকে দেখি, ছাত্রলীগ সেক্রেটারি Sadman Nahian Sezhan (CSE-13) (ID Deactivated) এর উপর হামলার পরিকল্পনার মিথ্যা অভিযোগে আমাকে সহ ৭ জনকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে অফিসিয়াল নোটিশ দিয়েছে কুয়েট ছাত্রলীগ। ৭ জনের মধ্যে ছিলাম আমি, আমার ডিপার্ট্মেন্টের ২ জন বন্ধু, আর ৪ জন জুনিয়র।
তখন ২ সেমিস্টার বাকী ছিল আমার। ক্যাম্পাসে ঢুকে পরীক্ষা গুলো দিতে পারলে মুক্তি। কিন্তু কিভাবে যাওয়া যায়। অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজেদের অভিভাবক নিয়ে কুয়েট প্রশাসনের কাছে যাওয়ার জন্য। তারপর, সবার অভিভাবক খুলনায় পৌছালে আমরা সবাই গেলাম ক্যাম্পাসে, ভিসি স্যারের অফিসের সামনে।
আমাদেরকে কোন ভাবেই ভিসি স্যারের কক্ষে ঢোকার পারমিশন দেয়া হয় নাই । অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকে, অনেক অনুরোধ করে শেষে ঢুকতে দেয়া হয়। সেখানে ডিন, প্রভোস্ট সহ অনেকেই ছিল। আমাদের কথা ভালভাবে না শুনেই তাদের সবার এক কথা, “ছাত্রলীগের বিষয়ে সমস্যা তাদের সাথে সমাধান করো, আমাদের দ্বারা কিছু করা সম্ভব না”। তারপর আমাদেরকে সে অফিস থেকে বের করে দেয়া হলো।
DSW টি গিয়েও কোনোলাভ হল না। মানে যারা আমাদের খুজে না পেয়ে নিষিদ্ধ করেছে, আমাদের অত্যাচার করার জন্য অপেক্ষা করছে, তাদের কাছে গিয়ে সমাধান করতে হবে। মার খেয়ে সমাধান?
আর কোন উপায় না পেয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে আসলাম। আমার আব্বু-আম্মু খুব মর্মাহত ছিল। তাদের জন্য খুব কস্ট লাগছিল আমার। কত আশা নিয়ে আমাকে এখানে ভর্তি করিয়েছিল, আর আজ এত অপমান। কয়েকদিন পরে দেখি, আমার ২ বন্ধু Ahsan Habib (TE-15) এবং Ashikur Rahman (TE-15) কে হল থেকে স্থায়ী বহিস্কারের নোটিশ দেয়া হইছে ছাত্রলীগের মনোরঞ্জনের জন্য। তারা বঙ্গবন্ধু হলে সংযুক্ত ছিল।
কিছুদিন অপেক্ষা করার পর, ক্যাম্পাস একটু স্বাভাবিক মনে হলে কোন রকম লুকিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে পরীক্ষাগুলো তে অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষা গুলো শেষ হলে, কি যে খুশী হয়েছিলাম, আহ, আল্লাহ যেন আমাকে এই কুয়েটের জাহান্নাম থেকে একেবারেই মুক্তি দিয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ।